যেসব গ্রামে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি, সেখানে
সৌরবিদ্যুৎই বড় ভরসা। সৌরবিদ্যুতের জন্য বাড়ির টিনের চালে সোলার প্যানেল
বসানো গ্রামে এখন আর কোনো নতুন ঘটনা নয়। শুধু প্রত্যন্ত অঞ্চল নয়, পরিবেশ
অনুকূল বলে শহরেও অনেক সচেতন মানুষ সৌরবিদ্যুতের ব্যাপারে আগ্রহী।
বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিতে সরকারও এদিকে উৎসাহ
দিচ্ছে।
সূর্যের আলোকে বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তর করে সোলার প্যানেল। এই সোলার
প্যানেলের ক্ষমতা আরও বাড়ানোর জন্য বিশ্বজুড়ে যেসব গবেষক খেটে চলেছেন,
তাঁদেরই একজন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী জামাল উদ্দীন। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের
মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের ‘ইনভেন্টর অব দ্য ইয়ার’ (বর্ষসেরা উদ্ভাবক)
পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। সবচেয়ে কার্যকর সৌরকোষ বা সোলার সেল উদ্ভাবনের জন্য
এ পুরস্কার পান তিনি। তাঁর পেশাগত পরিচয় হলো তিনি বাল্টিমোরের কপিন স্টেট
ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক।অসংখ্য সৌরকোষের সমন্বয়ে একটি সোলার প্যানেল তৈরি হয়। জামাল উদ্দীনের নেতৃত্বে একটি তরুণ গবেষক দল বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্যকর সোলার সেল উদ্ভাবন করেছে। সৌরকোষের কার্যক্ষমতাকে তারা ৪৪ দশমিক ৭-এ উন্নীত করেছে। বিখ্যাত বোয়িং কোম্পানির স্পেকট্রোল্যাব ২০০৯ সালে কার্যকারিতা তুলেছিল ৪১ দশমিক ৬-এ। ২০১০ সালেই জামাল উদ্দীন ও তাঁর দল এ রেকর্ড ভেঙে কার্যকারিতা ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশে তোলে। জামাল উদ্দীনেরা ২০১২-এর জুলাই মাসে আরেক ধাপ এগিয়ে যান। বাড়িতে ব্যবহূত সাধারণ সোলার প্যানেলের সেলগুলো ১৪ থেকে ২০ শতাংশ কার্যকারিতাসম্পন্ন হয়। জামাল উদ্দীন জানান, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সৌরকোষের কার্যকারিতা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত তুলতে পারলেই তা এক বিশাল সাফল্য হবে। সে লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছেন তাঁরা।
কপিন স্টেট ইউনিভার্সিটির ন্যানো প্রযুক্তিকেন্দ্রে এই গবেষণার কাজে জামাল উদ্দীনকে সহায়তা করেছেন চার শিক্ষার্থী। তাঁরা হলেন আসিফ আহমেদ, জিও টন আর্চার, পপি আক্তার ও সুনীল যাদব। আসিফ ও পপি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। জামাল উদ্দীন এই ন্যানো প্রযুক্তিকেন্দ্রের পরিচালক। মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য রাতে দেখার উপযোগী চশমায় (নাইট ভিশন গগলস) ব্যবহারযোগ্য সৌরকোষ তৈরির জন্য গবেষণাটি করেছিল তাঁর দল।
জামাল উদ্দীন জানালেন, সৌরকোষের গবেষণা তাঁরা চালিয়েছেন কম্পিউটার-সিম্যুলেশনের মাধ্যমে। গবেষণাগারে হাতেকলমে সোলার সেল তৈরি করে দেখেননি এখনো। যেটা বোয়িং করেছে। এর কারণ ন্যানো প্রযুক্তিকেন্দ্রে এখনো সে পর্যায়ের সুবিধা নেই। তবে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের উন্নত গবেষণাগারে এ নিয়ে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ অনুধাবনকেন্দ্রের (নাসা) বিজ্ঞানীরাও জামাল উদ্দীনের উদ্ভাবনের প্রশংসা করেছেন। ফ্লোরিডায় নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার গোটা যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩০ জন অধ্যাপককে আমন্ত্রণ করে সৌরশক্তির ব্যবহারের বিষয়ে নতুন ধারণা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। জামাল উদ্দীন ছিলেন তাঁদের অন্যতম। সুনীল যাদবসহ কপিনের শিক্ষার্থীরা তাঁর নেতৃত্বে ‘সোলার সেইল’ নামে একটি মহাকাশযানের নকশা তৈরি করেন। এটি নাসার ল্যাংলি গবেষণাগারের বিশেষজ্ঞদের কাছে প্রশংসিত হয়।
ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডে গবেষণা করার সময় জামাল উদ্দীনের গবেষক দল ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ‘নন ইনভ্যাসিভ’ পদ্ধতিতে রক্তের চিনি মাপার পদ্ধতি উদ্ভাবন করে। এতে চোখে স্থাপন করা কন্ট্যাক্ট লেন্সের মধ্যে একধরনের তরল প্রয়োগ করে চিনির মাত্রা মাপা যাবে। সাধারণত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে সুচ ফুটিয়ে রক্ত নিতে হয়। তা-ও একবার ফলাফল জানা যায়। কিন্তু জামাল উদ্দীনের উদ্ভাবিত এই পদ্ধতিতে স্রেফ রোগীর কোমরে বাঁধা একটি যন্ত্রের মাধ্যমে যখন-তখন চিনির মাত্রা জানা যাবে।
এ ছাড়া ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই সেন্টার ফর ফ্লুরোসেন্স স্পেকট্রোস্কোপিতে জামাল উদ্দীন মেটাল ইনহ্যানসড ফ্লুরোসেন্স নামের একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এতে ক্যানসারের কোষকে অনেক গুণ বড় করে দেখা সম্ভব। এর ফলে কেমোথেরাপি দিয়ে শুধু ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলোকেই বেছে বেছে ধ্বংস করা যাবে। আক্রান্ত হবে না সুস্থ কোষ।
জামাল উদ্দীন ১৯৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতক এবং ৯০-এ একই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৬-এ জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষকতা ও গবেষণায় কৃতিত্বের জন্য সম্প্রতি মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটি সিস্টেম তাঁকে এক বছরের জন্য এলকিনস প্রফেসরশিপের জন্য মনোনীত করেছে। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট উইলসন এইচ এলকিনসের নামে প্রবর্তিত হয় এ সম্মানজনক পুরস্কার।
গবেষণার পাশাপাশি দেশের সঙ্গে যোগাযোগটা আরও নিবিড় করতে চান জামাল উদ্দীন। বছরের কয়েক মাস বাংলাদেশে এসে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে কাজ করার আগ্রহ রয়েছে তাঁর। দেশে ন্যানো প্রযুক্তি (অতি ক্ষুদ্র বিষয়ের প্রযুক্তি) নিয়ে কাজ করারও ইচ্ছা আছে। এ কাজের জন্য বাংলাদেশে একটি ইনস্টিটিউটও গড়ে তুলতে
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন